গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ এবং যাবতীয় তথ্য সব জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনি গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ এবং গর্ভবতী মহিলার যাবতীয় সব তথ্য সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন,তাহলে এই পোস্ট আপনার জন্য। আমি এ পোস্টে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ এবং গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা ও গর্ভবতী অবস্থায় যাবতীয় তথ্য সম্পর্কে তুলে ধরেছি ।আপনি পুরো পোস্টটা পড়ুন তাহলে সবকিছু জানতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি এই পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা,ঘুমানোর নিয়ম,কি কি আমল করা উচিত,গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত এবং নিষেধ এবং ব্যায়াম সম্পর্কে।
ভূমিকা
গর্ভবতী বা গর্ভঅবস্থা এমন একটা বিষয় যে একটা নারীর শরীরে আরেকটা প্রাণ আসে এবং আস্তে আস্তে সেটা পৃথিবীতে জন্ম নেয়।১০ মাস ১০ দিন একটা গর্ভবতী মেয়ে সংগ্রাম করে,প্রতিটা মাস হয় ৩১ দিনে।গর্ভবতী মহিলা এই আশায় থাকে যে একটা ফুটফুটে বাচ্চা পৃথিবীতে আসবে, পিচ্চি দুটা হাত ধরবে,মুখের উপরে হাত বুলাবে।আরো পড়ুন :: মাথা ব্যথা কমানোর উপায় এবং দোয়া জেনে নিন
একটা মানুষ ৪৫ ইউনিট ব্যথা সহ্য করতে পারে কিন্তু একটা মা যখন তার শিশুকে জন্ম দেয় তখন ৫৭+ ইউনিট ব্যথা সহ্য করতে হয়।ভাবুন একটা মা কত কষ্ট করে একটা শিশুকে জন্ম দেয়।
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
গর্ভবতী হলে অনেক রকমের লক্ষণ সামনে প্রকাশ পায় তবে বিশেষভাবে কোন লক্ষণ নাই। কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো নিচে বলা হলো- পিরিয়ড মিস হওয়াকে বিশেষ লক্ষ্মণ ধরা হয়।অধিকাংশ মেয়ের ক্ষেত্রে এমনও হয় যে ১ মাস পার হয়ে গেলেও অনেকেই বুঝতে পারে না।
- টেস্ট কিট দিয়ে পরিক্ষা নেওয়ার পরে যখন বুঝতে পারবে যে সে গর্ভবতী তাহলে তার গর্ভবতীর সময় গতমাসের পিরিয়ড শেষ হওয়া থেকে ধরা হবে।
- গর্ভবতী অবস্থায় ঘুম থেকে উঠার পরে মাথা ঘুরানো এবং দূর্বল লাগা হচ্ছে সাধারণ বিষয়।
- স্তন ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া।
- খাবারের রুচি আসে না।
- বমি বমি ভাব হয়।
- শরীরের তাপ বেড়ে যাওয়া এসব হচ্ছে মৌলিক লক্ষ্মণ।
- আপনার মধ্যে যখন এসব ঘটবে তখন আপনি বুঝবেন আপনি গর্ভবতী।
গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা
গর্ভবতী হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা দিলেই একজন গর্ভবতী মায়ের উচিত খাবারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা যাতে করে সে নিজে এবং তার পেটের বাচ্চা দুজনেই নিরাপদ থাকে।
- এমন খাবার উচিত যেসব ভিটামিন, আইরন,সুষম, আমিষ,এই ধরণের খাবার খেতে হবে।
- টাটকা শাক সবজি যেমন শিম,লাল শাক, পাঁচ মেশালি শাক,লাউ,গাজর,আলু,মোটকথা বেশি বেশি সবজি খেতে হবে।
- দুধ এটা অন্তত জরুরি। প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম দুধ খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- মাংস।
- খাবারের তালিকায় দেশি মুরগী বা গরুর গোস্তো রাখার চেষ্টা করবেন।
- বাদাম এবং কিসমিস।বাদাম এবং কিসমিস খাওয়ার ফলে শরীরের দূর্বলতা দূর করে এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যুক্ত করে।
- ভিটামিন-এ,ভিটামিন-বি,ভিটামিন-সি,ভিটামিন-ডি,ভিটামিন-বি১২,ভিটামিন-৬,এসব যুক্ত খাবার খেতে হবে।শাক সবজিতে ভিটামিন-এ থাকে,লেবু,জাম্বুরা এসবে ভিটামিন-সি থাকে,গরুর মাংসে ভিটামিন বি৬ থাকে,মাছ,মুরগির মাংস এসবে ভিটামিন বি১২ থাকে।
গর্ভবতী মায়ের ঘুমানোর নিয়ম
একজন গর্ভবতী মায়ের ঘুমানোর নিয়ম-কানুন মেনে ঘুমানো উচিত। যাতে করে তার পেটের বাচ্চা নিরাপদ থাকে। একজন মহিলাকে তখন থেকে গর্ভবতী ধরা হবে যখন থেকে তার গর্ভবতী হওয়ার যেসব লক্ষণ রয়েছে সেসব প্রকাশ পাবে।
- সর্বপ্রথম আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত যে উনি যেখানে ঘুমাবেন সেখানটা যেন একটা পরিস্কার থাকে,কোন রকমের বিশৃঙ্খলা না থাকে।
- আমরা অনেকে অনেক ভাবে ঘুমাই,গর্ভবতী অবস্থায় লক্ষ্য রাখা উচিত যে উনি যেন দক্ষিণ - পশ্চিম দিক করে ঘুমাই,বাকি ২ দিক এড়িয়ে চলবে।
- উনি যে ঘরে ঘুমাবে সে ঘরে টিভি,ইলেকট্রনিক জিনিস এসব রাখা হতে বিরত থাকুন। এসব আপনার বাচ্চার উপরে প্রভাব ফেলবে।
- এক পাশে ঘুমানো উত্তম এতে করে মা এবং বাচ্চা দুজনেরই শান্তি হবে,ডান পাশ করে ঘুমানো সুন্নত এজন্য ডান পাশ হয়ে ঘুমানোই ভালো।
- ঘুমানোর সময় সাথে ২ টা অতিরিক্ত বালিশ রাখুন, আপনার কোন সমস্যার জন্য বা আরাম করে ঘুমানোর জন্য কাজে দিবে।
গর্ভবতী মায়ের আমল
প্রত্যেক মানুষের সবসময়ই আমল করা উচিত। গর্ভবতী হওয়ার পরে আরো বেশি করা উচিত। যাতে সন্তান ভালো এবং নেক হয়। নিচে গর্ভবতী মায়ের আমল তুলে ধরা হলো-
- একজন মা যখন নেককার হবেন বা নেক কাজ করবেন তখন তার গর্ভ থেকেও নেককার সন্তান জন্ম নেবে।সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত।
- رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء ‘রাব্বি হাবলি মিনলাদুনকা জুররিয়াতান তাইয়িবাতান ইন্নাকা সামিউদ্দুয়া’, অর্থাৎ, ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।’ (সুরা আলে ইমরান: ৩৮) সুসন্তান বা পরহেজগার সন্তান লাভের জন্য এই দোয়া পড়বেন।
- আপনার যদি নেক নিয়ত থাকে তাহলে এই দোয়া পড়তে পারেন যেমন- رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ ‘রাব্বি হাবলি মিনাস সালিহিন’, অর্থাৎ ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দান করুন।’ (সুরা সাফফাত: ১০০)।
- হারাম খাবার থেকে বেঁচে থাকতে হবে কারণ আপনি যেসব খাবেন সেই একই খাবারই আপনার সন্তান পেটের মধ্যে খাবে।হারাম খাবার থেকে কখনও ভালো কিছু আশা করা যায় না।
- হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকবেন।আপনার হারাম কাজের প্রভাব আপনার সন্তারের উপরে পরবে।
খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সাবধান থাকতে হবে কারণ আপনার খাবারের প্রভাব তার উপরে পরবে। গর্ভবতী মায়ের কি কি খাবার খাওয়া উচিত নয় সেসব জেনে নিন।
- ক্যাফেইন জাতীয় যেমন চা কফি এসব কম কম খাবে,এসবে বেশি খাবার ফলে সমস্যা হয়।
- সমুদ্রের মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকবে, লবণাক্ত পানির কিচ্ছু খাবে না,মিঠা পানির সবকিছু খাবে।
- আধা সিদ্ধ যেটাকে আমরা হাফ বয়েল বলি এরকম ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকবে।
গর্ভবতী মায়েদের ব্যায়াম
প্রতিটি মানুষের উচিত প্রতিদিন কিছু পরিমাণে হলেও ব্যায়াম করা ।গর্ভবতী মায়েদের ব্যায়াম করা তাদের শরীরের জন্য উপকার।
- শ্যালো ব্রিদিং এটা হচ্ছে মেরুদণ্ড সোজা করে দুই পা সামনের দিকে সোজা করে দিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নেওয়া। প্রতিদিন ৫ মিনিট করার চেষ্টা করা।
- স্টোমাক ব্রিদিং এটা হচ্ছে দুই পা ভাজ করো বসবে তারপর পেটে এক হাত আর বুকে এক হাত রাখবে তারপর শ্বাস নিবে আর আস্তে আস্তে ছাড়বে।প্রতিদিন ১০ মিনিট করার চেষ্টা করবে।
- অন্টারনেটিভ ডিপ ব্রিদিং এটা হচ্ছে শুয়ে থেকে শ্বাস উপরে নিবে তারপর এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনতে গুনতে ছাড়বে।
- চেস্ট ব্রিদিং এটা হচ্ছে সোজা হয়ে দাঁড়াবে তারপর দুই পা একসাথে করবে যতটুকু সম্ভব তারপর দুই হাত বুক সোজাসুজি তুলবে তারপর শ্বাস নিবে উপরের দিকে আর আস্তে আস্তে ছাড়বে।
শেষ কথা
অনেক কষ্টের ফলে একটা সন্তান জন্ম নেয়, পেটে মারা গেলে বিষয়টা অনেক কষ্টকর। যখন থেকে একজন মহিলা বুঝতে পারবে যে গর্ভবতী তখন থেকে তার উচিত সাবধান থাকা। আপনার আশাপাশে খেয়াল করলে দেখবেন অনেকের বাচ্চা হয় না।আপনার বাচ্চা হচ্ছে আপনি শুকরিয়া আদায় করুন এবং সাবধান থাকুন।আমার পোস্টটা পড়ে যদি আপনার উপকার হয় তাহলে আপনার আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুমহলে শেয়ার করবেন যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে।
AZ TEC MAX নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url